গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ৭টি উপায় জেনে নিন
মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করা প্রত্যেকটি মেয়ের জন্যই একটি সৌভাগ্যের বিষয়। আপনারা অনেকে আমাদের কাছে জানতে চান গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম উপায় সম্পর্কে।
তো এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ৭টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ৭টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
পোস্ট সুচিপত্রঃ গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ৭টি উপায়
গর্ভধারণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
বাচ্চার জন্মদানের আগেই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। অর্থাৎ গর্ভধারণ এর পরিকল্পনা করার প্রায় তিন থেকে চার মাস আগে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। এই চিকিৎসক আপনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক রোগব্যাধির ইতিহাস, আপনার স্বাস্থ্যগত অবস্থা, কোন ঔষধ খাচ্ছেন, কি খাচ্ছেন এসব বিষয় খতিয়ে দেখবেন। এছাড়া শরিরের ওজন, রক্তের পরিমান সঠিক আছে কিনা সেবিষয়েও যাচাই করবেন।
কোন ধরনের ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে যেগুলো ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট গর্ভে শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে সেই সমস্ত ঔষধ বদলানোর পরামর্শ দিবেন। আপনার যদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি রোধ থাকে তাহলে আগেই সেই রোগগুলো নিয়ন্ত্রণ করা অতীব জরুরি, কারণ এই সমস্যাসমূহের জন্য গর্ভের সন্তান বিকলঙ্গ বা জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে।
আপনার ওজনগত অবস্থা ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা করে আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে, শারিরিক ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা, পারিবারিকভাবে ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদির অভ্যাস থাকলে তা বাদ দেওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে ধারণা দিবেন। এজন্য গর্ভধারণ এ পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরী এতে বাচ্চার তো উপকার হবে তার পাশাপাশি মায়ের অনেক উপকার হবে। এজন্য আপনারা সবাই চেষ্টা করবেন গর্ভধারণের পূর্বে চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে।
গর্ভধারণে ফলিক এসিড ও ভিটামিন ‘এ’ এর গুরুত্ব
গর্ভধারণের সময় একটি বিষয় সর্বদা মনে রাখতে হবে গর্ভের সন্তানের পুষ্টি, গঠন ও সুস্বাস্থ্য মায়ের খাবারের উপর পুরোপুরি নির্ভর করে। এজন্য মাকে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার, ফলমূল, ভিটামিন যুক্ত খারাব প্রভৃতি খাওয়া একান্ত প্রয়োজন। তবে এসময় অনেকের খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। এই সমস্যার জন্য মা নিজে দিনে পাঁচ থেকে ছয় বার (পরিমানে কম কিন্তু বারে বেশি) পর্যপ্ত পরিমান খাবার খেয়ে দেখতে পারেন।
এসময় প্রচুর পরিমান বাদাম খাওয়া উচিৎ, কারণ বাদামে প্রচুর পরিমাণ ফলিক এসিড আছে। এছাড়া সবুজ পাতার শাক-সবজি, শিম, কমলালেবু, ছোট মাছ, মোলাঢেলা মাছ প্রভৃতি ফলিক এসিড ও ভিটামিন যুক্ত খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্রে স্পিনা বিফিটার মত সমস্যা নিয়ে জন্ম নেওয়ার আশংকা ৫০ থেকে ৭০% পর্যন্ত হ্রাস পায়।
আপনারা চাইলে আলাদা করে ফলিক এসিড খাওয়ার পরিবর্তে মাল্টিভিটামিনও খেতে পারেন ফলে ৪০০ মাইক্রগ্রাম মাত্রায় ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ হবে। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন ফলিক এসিড ও ভিটামিন এ গর্ভধারণের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।তো আপনারা সকলে গর্ভধারণের পূর্বে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন এতে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে আপনার সন্তানের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
গর্ভধারণের জন্য ধুমপান, মদ্যপান ও নেশাদ্রব্যসমূহের ক্ষতিকর প্রভব
ধূমপান, মদ্যপান ও নেশাদ্রব্য জাতীয় খাবার সবগুলোই স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রত্যেকের শরিরে (যারা সেবন করে বা যারা সেবন করে না উভয়ের) পরে এমনকি গর্ভের শিশুও এর থেকে প্রভাবমুক্ত নয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ধূমপান, মদ্যপান ও নেশাদ্রব্য জাতীয় খাবার সেবনের অভ্যাস গুলোর মধ্যে একটি অভ্যাসও যদি থাকে তাহলে গর্ভজাত শিশুর সময়ের আগে জন্ম নেওয়া, মিস ক্যারেজ হওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন-তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে বেসন
এছাড়াও তামাকজাত সামগ্রী বা নেশাদ্রব্য দীর্ঘ দিন সেবন পুরুষদের ক্ষেত্রে বীর্যের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। পরোক্ষ ভাবে ধূমপানেও (ধূমপায়ীর ধোয়া থেকে পরোক্ষভাবে ধূমপান) সন্তান জন্মদানে বাধা সৃষ্টি হয়। গর্ভধারণের সময় মদ্যপান থেকে দূরে থাকতে বলেছেন গবেষকরা। কারণ এতে গর্ভের শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এসব অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ছেড়ে দেয়া কঠিন হতে পারে গর্ভধারণের আগে তাই এসব বদভ্যাস দূর করতে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে লজ্জা করবেন না।
গর্ভধারণে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীতা
নিজের সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য প্রচুর পরিমাণ খাবার খাওয়া জরুরি। পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে যাতে গর্ভধারণের আগেই আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পুষ্টি উপাদান জমা হয়ে যায়। গর্ভাধারণের পরিকল্পনা করার সাথে সাথে প্রতিদিন প্রচুর পরিমান (প্রায় দুই বাটি) ফল, আড়াই কাপ বা বাটি নানা রকম সবজি, হোল গ্রেইন বা শাকসবজি খাবার, উচ্চ মাধ্যমিক ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন দুধ, কমলার রস, টক দই) ইত্যাদি খেতে শুরু করুন।
গর্ভধারণের পূর্বে আপনার ওজন ঠিকঠাক আছে কি?
গর্ভধারণের জন্য সঠিক সর্বোত্তম উপায়গুলোর মধ্যে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা অন্যতম। আপনার ওজন বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ঠিকঠাক রাখা অতীব জরুরি। গর্ভধারণের জন্য কম ওজন যেমন গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমায় তেমনই বেশি ওজন আবার গর্ভধারণের জন্য ক্ষতিকর। ওজন অতিরিক্ত পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে শরিরে মেদ-ভূড়ি বা চর্বি বৃদ্ধি পায়, যার জন্য গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম দেওয়া উভয় ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়।
পক্ষান্তরে ওজন কম হলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়, গর্ভের সন্তান পুষ্টিহীন ও রোগা হয়, মা ও বাচ্চার স্বাস্থ্য ঝুকি থকে ও কম ওজন বিশিষ্ট সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা থাকে। তাই গর্ভধারণের আগেই নিরাপদ ওজন বজায় রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। আর গর্ভধারণের পূর্বে ওজন ঠিক রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা এতক্ষণে আপনারা বুঝতে পেরেছেন। তাই আপনারা সকলে চেষ্টা করবেন গর্ভধারণের পূর্বে ওজন ঠিক ঠাক রাখার জন্য, নতুবা উপরে উল্লেখিত সমস্যা গুলো আপনার বা গর্ভের সন্তানের দেখা দিতে পারে।
গর্ভধারণের পূর্বে নিয়মিত ব্যায়াম করা
সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ , শুধু তাই নয় শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতেও ব্যায়াম করা খুবই প্রয়োজন। কিছু বিষয় আছে যা আপনা-আপনি হয়ে ওঠে না, প্রতিদিনের চর্চার মাধ্যমে অভাসে পরিনত হয়। তেমনই একটি বিষয় হলো ব্যায়াম। বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, শরীরের ফিটনেস ঠিক রাখতে প্রভৃতি প্রয়োজনে ব্যায়ম করা অত্যন্ত দরকারি।
গর্ভধারণের ক্ষেত্রে ব্যায়াম বা যোগব্যায়ামের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। গর্ভধারণে স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি থাকতে হবে আধ ঘণ্টার নিয়মিত ব্যায়াম করার অভাস। যোগব্যায়াম এর কৌশলগুলো মেয়েদের যেমন উদ্বেগ বা হতাশা দূর করে শারিরিক প্রশান্তি ও মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে তেমনই পুরুষের জন্য শরীরে হরমনের পরিবর্তনের মাধ্যমে শুক্রাণুর উচ্চমাত্রায় প্রদাহ সৃষ্টি করে।
গর্ভাবস্থায় যদি ব্যায়ামে খুব বেশি চাপ মনে হলে দিনে ১০ থেকে ২০ মিনিট দিয়ে শুরু করতে পারেন। এছাড়া কিছু হালকা ব্যায়াম যেমন, লিফটের বদলে দু একটা সিঁড়ি পায়ে হেঁটে উপরে উঠা, পার্কিং এর আগেই গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা হেটে যান ও ঘরের টুকটাক কাজও করতে পারেন নিজেকে ঠিক রাখতে। এই কাজগুলো আপনার শরীরকে দৈনন্দিন আরও প্রশান্তি ও মনোবল বৃদ্ধি করে আপনাকে স্ট্রং করতে সাহায্য করবে। গবেষণায় দেখাগেছে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে সিজারিয়ান অপারেশনের প্রবণতা কমে গিয়ে নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা বৃদ্ধি পয়।
গর্ভধারণের পূর্বে সংক্রমণ এড়িয়ে চলুন
সংক্রামণ রোগ-ব্যাধি সহজেই সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। মায়ের শরীরে কোন সংক্রমণ রোগ থাকলে তা গর্ভস্থ শিশুর শরীরেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই এ সংক্রামণ রোগ সম্পর্কে আগে থেকে সচেতন হওয়া উচিত। বাইরের খোলা দূষিত খাবারে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস থাকার কারণে ভুলেও খাওয়া উচিত নয়, এগুলো খাবার খাওয়া আপনার নিজের ও গর্ভের শিশুর জন্য বিপদজনক হতে পারে। এছাড়াও এলার্জি জাতীয় বা যে খাবার খেলে সংক্রমিত রোগের প্রভাব বৃদ্ধি পায় সেগুলো খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম। এ বিষয়গুলো আপনাদের অবশ্যই গর্ভধারণের পূর্বে মাথায় রাখতে হবে নয়তো বা সন্তানের যে কোনো রকম ক্ষতি হতে পারে।
উপসংহার
“গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ৭টি উপায়" সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে । আসা করি আপনারা সকলেই এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহোকারে পরেছেন । এই আর্টিকেলটি যদি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আপনারা
- গর্ভধারণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- ফলিক এসিড ও ভিটামিন ‘এ’ এর গুরুত্ব
- ধুমপান, মদ্যপান ও নেশাদ্রব্য বাদ দেওয়া
- গর্ভধারণের পূর্বে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
- গর্ভধারণের পূর্বে আপনার ওজন ঠিকঠাক আছে কি?
- গর্ভধারণের পূর্বে নিয়মিত ব্যায়াম করা
- গর্ভধারণের পূর্বে সংক্রমণ এড়িয়ে চলুন
ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন ।
আরো পড়ুনঃ হেপাটাইটিস বি হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
গর্ভধারণের সঠিক সর্বোত্তম ৭টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে লেখা এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি আশা করি আপনার ভালো লেগেছে । যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর এই রকম আরো মজার মজার পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট BRIGHT FUTURE IT RARK এর সাথেই থাকুন । দেখা হচ্ছে পরবর্তি কোন আর্টিকেলে ততক্ষণ পর্যন্ত সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ !
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url